Affiliate Marketing

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি,কেন, কিভাবে? What is Affiliate Marketing?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: প্রযুক্তিনির্ভর এই বিশ্বে  মানুষের কেনাকাটার জন্য এখন আর বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। বাসা বা অফিসে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ই কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা করতে পারেন। অনলাইনে অর্ডারকৃত পণ্য ক্রেতার হাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেয় ইকমার্স প্রতিষ্ঠান। 

ই কমার্স সাইটগুলো তাদের পণ্যের প্রসারের উদ্দেশ্যে অ্যাফিলিয়েট সুবিধা দিয়ে থাকে। আর মার্কেটাররা এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেরা মার্কেটিং করে আয় করে। এটাই হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।

 সহজে বলা যায়, আপনি অনলাইনে কোনো পণ্য বিক্রি করতে চাইলে সে প্রতিষ্ঠান আপনাকে তাদের পণ্যের একটা লিংক দিবে। আপনার দেয়া লিংকের মাধ্যমে কোন গ্রাহক যদি তাদের ওয়েবসাইটে ঢুকে এবং পণ্য ক্রয় করে, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেবে। 

এই কমিশনের মাধ্যমে অর্থ আয় করার মাধ্যকেই বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে একটি বিজনেস আইডিয়া। যেখানে কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে দিয়ে কমিশন জেনারেট করাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কাজ করে তিনটি উপায়ে। যেখানে বিজ্ঞাপন দাতা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সেল করে দেওয়ার জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের অফার করে। 

 তখন সে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল অথবা সোশ্যাল মিডিয়া ইউজ করে কাস্টমারের কাছে বিক্রি করা হয়। প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে দেওয়ার জন্য সেই মার্চেন্ট বিক্রির কিছু টাকা কমিশন হিসেবে দেয়। এই পুরো সিস্টেম ফলো করে আয় করাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরুর আগে যা জানা জরুরী

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি বিজনেস, আপনি হুট করেই এই বিজনেস শুরু করতে পারবেন না। শুরু করতে পারবেন কিন্তু এতে লাভের থেকে লস বেশি হবে। কারন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার আগে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর দুনিয়ায় ৩ টি বিষয় সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো হলো টাইম, টেকনিক এবং ইনভেস্টমেন্ট। এছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে পর্যায়ক্রমে সেগুলো সম্পর্কে জানবো।

যেভাবে শুরু করবেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং:

বেশ কয়েকভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে কাজ শুরু করতে পারেন- সোশ্যাল সাইটে লিংকগুলো শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে, ল্যান্ডিং পেইজ তৈরির মাধ্যমে, ব্লগ সাইট বা ওয়েবসাইট তৈরির মাধ্যমে। সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো ওয়েবসাইট তৈরি করে কাজ করা। তবে গতানুগতিক ওয়েবসাইট থেকে এ ওয়েবসাইটের ধরন একটু আলাদা হবে। যখন আপনি কোন ই কমার্স সাইটের কোন প্রডাক্ট প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন এবং সেখানে আপনার নির্ধারিত প্রডাক্টের বর্ণনাসহ যখন সেটা বিক্রির উদ্দেশ্যে দিবেন, তখন আপনার ওয়েবসাইটটিকে বলা হবে নিশ সাইট। 

 নিশ সাইটে একটি ছোট বিনিয়োগের উপর বড় অংকের আয় করা সম্ভব। আর এটি যদি হয় প্যাসিভ ইনকাম তাহলে তো কথাই নেই। প্যাসিভ ইনকাম হলো এমন আয় যেখানে আপনি সরাসরি সম্পৃক্ত না থেকেও আয় করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি একটি নির্দিষ্ট সময় এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ করে রাখবেন এবং পরবর্তীতে সক্রিয়ভাবে কাজ না করা সত্ত্বেও আপনি আয় করতে থাকবেন। নিশ সাইট নিয়ে কাজ করে অনেকেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। অনেকে মাসে কয়েক হাজার ডলারও ইনকাম করছে।

নিশ সাইটের জন্য যা দরকারঃ

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে সবার আগে নীশ নির্বাচন করতে হবে। আপনার পুরো প্রোজেক্টের সফলতা নির্ভর করে আপনার নীশ নির্বাচন করার উপর। যেহেতু আপনার ইনকাম নির্ভর করে প্রোডাক্ট বিক্রির উপর সেহেতু আপনাকে বেশি ভিজিটর জেনারেট করবে এমন নীশ নির্বাচন করতে হবে। যত বেশি ভিজিটর তত বেশি প্রোডাক্ট সেল হবে। নীশ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনি যে প্লাটফর্মে অ্যাফিলিয়েট করবেন সেখানে কি কি নীশ আছে তা রিসার্চ করে নিতে হবে।

১। কি-ওয়ার্ড রিসার্চ       ২। একটি ডোমেইন নাম নির্বাচন করা ও হোস্টিং সেট আপ      ৩। ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল      ৪। মানসম্মত কনটেন্ট       ৫। ভাল মানের ব্যাকলিংক তৈরি করা         ৬। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং           ৭। দরকারি পেজ সেটআপ         ৮। কাঙ্খিত কনভার্সন রেট

কিওয়ার্ড রিসার্চ

নীশ নির্বাচন করার পর আপনার প্রথম কাজ হবে উক্ত নীশ সম্পর্কে কিওয়ার্ড রিসার্চ করা। কারন আপনার ওয়েবসাইটের প্রধান ভিজিটর সোর্স হবে গুগল বা এরকম সার্চ ইঞ্জিন। সেখানে আপনি প্রথম পাতায় না থাকতে পারলে আপনার কাঙ্ক্ষিত ভিজিটর জেনারেট হবেনা। আপনার শর্টলিস্ট করা কীওয়ার্ড দিয়ে আর্টিকেল লিখিয়ে নিতে হবে। আর্টিকেল গুলো সার্চ ইঞ্জিন থেকে ভিজিটর নিয়ে আসবে যা পরবর্তীতে কাস্টমার হিসেবে রূপান্তরিত হবে।

প্রোডাক্ট রিসার্চ

একটি মার্চেন্ট সাইটে অ্যাফিলিয়েট করার জন্য অনেক প্রোডাক্ট থাকে। এদের মধ্যে সব প্রোডাক্ট নিয়ে আপনি কাজ করতে চাইলে আপনি কখনই সফল হতে পারবেন না। কিছু কিছু প্রোডাক্ট আছে যেগুলো নিয়ে সচরাচর সবাই অ্যাফিলিয়েট করে। যেমন ফিশিং, স্পোর্টস, হোম ইম্প্রুভমেন্ট ইত্যাদি নীশ রিলেটেড প্রোডাক্ট।

এসব নীশের প্রোডাক্ট সব থেকে বেশি সেল হয় জন্যে কম্পিটিশন বেশি। আপনি একজন নতুন মার্কেটার হিসেবে কম্পিটিটিভ নিসে ভালো সফলতা পাবেন না। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রোপার প্রোডাক্ট রিসার্চ করতে হবে। আপনাকে এমন প্রোডাক্ট নির্বাচন করতে হবে যেখানে কম্পিটিশন কম কিন্তু কমিশন বেশি।

ওয়েবসাইট তৈরি

নীশ, কীওয়ার্ড এবং প্রোডাক্ট রিসার্চ করার পর আপনার প্রথম কাজ হবে ওয়েবসাইট তৈরি করা। এখন আপনি যদি ওয়েবসাইট ছাড়া ইউটিউব চ্যানেল বা সোশ্যাল প্লাটফর্ম ইউজ করতে চান তাহলে আপনাকে চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজ গ্রো করতে হবে।

ধরে নিলাম আপনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট করবেন। সে ক্ষেত্রে ডোমেইন এবং হোস্টিং নিয়ে ডেভেলোপার দিয়ে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। মনে রাখবেন এই ওয়েবসাইট আপনার সেলস ফানেল হিসেবে কাজ করবে। সোনার ডিম দেওয়া হাসের মতো আপনাকে ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

কনটেন্ট স্ট্রাকচার ও ডেভেলোপমেন্ট

ওয়েবসাইট তৈরি করার পর আপনার কাজ হবে ওয়েবসাইটে কনটেন্ট আপলোড করা। কীওয়ার্ড রিসার্চ করার পর আপনার নীশ রিলেটেড অনেকগুলো কীওয়ার্ড আপনার কাছে আছে। রাইটার হায়ার করে অথবা আপনি নিজে ওই কীওয়ার্ড দিয়ে আর্টিকেল লেখা শুরু করে দেবেন। বেশি ভালো হয় কীওয়ার্ড রিসার্চ করার পর রাইটার দিয়ে লিখিয়ে রাখা। যখন আপনার ওয়েবসাইট রেডি হয়ে যাবে তখন একের পর এক কনটেন্ট আপলোড করতে পারবেন।

আর্টিকেল পাবলিশ করার আগে আপনাকে ভালো মতো কম্পিটিটরদের আর্টিকেল রিসার্চ করে স্ট্রাটেজি তৈরি করে নিতে হবে। আপনার আর্টিকেল যত ভালোমতো অপ্টিমাইজ করা থাকবে তত তারাতারি রাঙ্ক করবে। রিভিউ বা ইনফো যে ধরনের আর্টিকেল হোক ওয়েল রিসার্চ হতে হবে।

এসইও । ‍SEO

আপনি যখন একটি ওয়েবসাইট দাঁড় করাবেন তখন যে কয়েকটা বিষয় সবথেকে বেশি গুরুত্ব পাবে এসইও তার মধ্যে অন্যতম। মার্কেটিং করার জন্য মার্কেটাররা ফ্রী এবং পেইড এই দুই ওয়ে ইউজ করে। একটি অ্যাফিলিয়েট সাইট তৈরি করতে এমনিতেই আপনার অনেক ইনভেস্ট হয়ে যাবে। সেখানে আবার পেইড অ্যাড ক্যাম্পিং করাটা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ।

কিন্তু মার্কেটিং করার জন্য কোন ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই এসইও ইউজ করে সহজেই অনেক বেশি অর্গানিক ভিজিটর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে মোটামুটি সব মার্কেটার এই পদ্ধতি ইউজ করে।

কোন পণ্য কেনার আগে কাস্টমার ওই প্রোডাক্ট সম্পর্কে খোঁজ খবর করার জন্য গুগলে সার্চ করে। এসইও এর কারনে ওই সার্চ রেজাল্ট পেজে আপনার ওয়েবসাইট লিংক শো করলে কাস্টোমার সোজা আপনার অ্যাফিলিয়েট সাইটে প্রবেশ করবে, এভাবেই একজন ভিজিটর কাস্টোমারে রূপান্তরিত হবে।